আগস্ট ২০২৫ টা ঠিক কিরকম বুঝিয়ে বলা মুশকিল। হঠাৎ করেই ১২ ই আগস্ট আমার শুক্ত মা চলে গেল। একই সপ্তাহে আমার একটা বিচ্ছেদ ঘটল খুব সামলে রাখা সঙ্গী বাবার দেওয়া "Whirlpool" এর ফ্রিজ টার সাথে। ওর ডিপ ফ্রিজ এর আচ্ছাদন টা খুলে পড়ে গিয়েছিল। অসুবিধা হচ্ছিল কাজ করতে। আমি তাও ওকে আলাদা হতে দিচ্ছিলাম না। আমি আজ পর্যন্ত ফ্রিজ, বিছানা ঘরে থাকার আসবাব পত্র কিছুই কিনি নি। কেনার প্রয়োজন ও বোধ করিনি। আমার গাজিয়াবাদ এর প্রাক্তন বাড়িতে আমি মাটি তে শুতাম কোনো বিছানা ছাড়া। তারপর বাবা একদিন আমার জুতোর তাক, ফ্রিজ, টিভি, টেবিল, চেয়ার, আলমারি সব নিয়ে এসে বাড়িটা কে সাজালো যখন বাড়ির চাবিটা মা, বাবা কে দিয়ে দিয়েছিলাম। সেটা তখন ২০১১। তারপর বাবা আবার কলকাতা গেল, মা গেল । কলকাতায় অনেক গুলো বাড়ি কেনা হল। সবই আমার দাদার কেনা। আর আমি বাবার ঐ আসবাব পত্র গুলোকে একদম নিয়ে এসে জোরবাগ লেন এ বিকে দত্ত কলোনি তে উঠলাম। নতুন করে আর কিছু কেনার কথা কখনও মনে হয়নি। ২০১৪ বিশ্বকাপ টা দেখার জন্য একটি কম্পিউটার স্ক্রীন লাগালাম জাতে খেলা দেখতে পারি। কিন্তু অচিরেই বাবা আমার এই ভাড়া বাড়িতে আমার সাথে থাকতে লাগলো। কলকাতা থেকে আসলে সেই ফ্রিজ, খাট, ঐ গুলো ব্যবহার করত যা বাবাই কিনেছিল ছেলের থেকে বাড়ির চাবি পাওয়ার আনন্দে। আমি অবশ্য নিজের বাড়ি, তার সমস্ত জিনিষ পত্র গাজিয়াবাদের প্রান্তিক, উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের দিয়ে বি কে দত্ত কলোনি তে চলে আসলাম।
বাবাও চলে গেল 2016 তে। কিন্তু বাবার ফ্রিজ আমায় কখনো ছাড়েনি। কি অদম্য এক লেগে থাকার মানসিকতা নিয়েই শীত, গ্রীশ্ব, বর্ষা, তেরো পার্বণ, কোভিদ, পৃথিবীর রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে আমার সাথে থেকো গেলো। আমি মাঝে মাঝেই ওর সামনে গিয়ে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। ভাবতাম কত কিছু। বাকি সবাই কিরকম ভাবে 2011 থেকে চলে যাচ্ছিল, কিন্তু বাবার ফ্রিজ টা সুঠাম বট গাছের মত বৃদ্ধ হয়ে আমাকে ওর ভেতরে ঠান্ডা ছায়া দিল। তারপর আজ হঠাৎ ও কিছুটা বলেই চলে গেল। জানিনা এই চলে যাওয়াটা কে কি বলে। ওর ও হয়তো একটা রূপান্তর ঘটল। সত্যিই কি এটা তাহলে চোদ্দ বছরের পর নতুন বিচ্ছেদ নাকি একটা নতুন অবলম্বন, দিক কে ধরতে পারা। আমি ঠিক জানিনা। তোমরা যদি জানতে পার আমাকে একটু বলো!
No comments:
Post a Comment